চিকন হওয়ার উপায় কি

চিকন হওয়ার উপায় কী? জানুন ১১টি কার্যকর ট্রিকস

স্লিম বা চিকন হতে কে না চায় ? বর্তমানে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার দুশ্চিন্তায় অনেকেই ভুগছেন। স্বাস্থ্য মোটা হলে শারীরিক ও মানসিক দুই দিক দিয়েই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তাই আজকে আমরা চিকন হওয়ার উপায় এবং ওজন বৃদ্ধির কারন নিয়ে আলোচনা করবো। 

চিকন হওয়ার উপায়

ওজন বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে বর্তমানে নারী হোক বা পুরুষ উভয়ই চিন্তিত। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য আমরা তাই চিকন হওয়ার উপায় খুঁজি। উপায় থাকা সত্ত্বেও ব্যস্ত জীবনে তা অনুসরণ করা হয়ে ওঠে না। 

আজকে তাই এমন ১১ টি স্লিম বা চিকন হওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যা অনুসরণে আপনি কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে পারবেন।  চলুন তাহলে জেনে নিই –

১. শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করুন

স্লিম বা চিকন স্বাস্থ্যের  অধিকারী হতে হলে ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করুন। চিকন হওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। কারন ব্যায়াম করার মাধ্যমে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে জমে থাকা ফ্যাট নির্গত হয়। তাই চিকন স্বাস্থ্য ও আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন করতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করুন। দৈনিক অন্তত এক ঘন্টা ব্যায়াম করুন। 

ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় হলো সকাল ও বিকেল। জগিং, হাঁটা, সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, সাইলেলিং ইত্যাদি হলো চিকন হওয়ার উপযুক্ত ব্যায়াম। এছাড়াও ঘরে বসে আপনি যোগ ব্যায়াম, কার্ডিও, জুম্বা ইত্যাদি ব্যায়াম করতে পারেন। 

২. পানি পান করুন  

পানি আমাদের শরীর চিকন হওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। কারন পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ গুলো বের করে দেয়। ফলে শরীর হাইড্রেট থাকে এবং চর্বি দ্রবীভূত হয়। এজন্য দৈনিক ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুণ এবং প্রতিদিন খাওয়ার পুর্বে এক গ্লাস পানি পান করে নিন এতে খাবার চাহিদা অনেকটা কমে যাবে। 

এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীর আদ্র থাকে এবং পেট ভরে যায় ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে।  

৩. সকালের নাস্তা সঠিক সময় করুন 

ওজন কমাতে সকালের নাস্তা সঠিক সময় করুন। কারন সকালের নাস্তা শরীরে মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মেটাবলিজম খাদ্য দ্রুত হজম করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। অনেকে ওজন কমানোর জন্য সকালে নাস্তা করেন না। এতে ওজন কমে না বরং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত সকালে নাস্তা করুন।  

৪. প্রতিদিন শাক সবজি গ্রহণ করুন 

খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন টাটকা শাক সবজি রাখুন। কারন শাক সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

৫. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন 

খাদ্য তালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মুরগির মাংস, ডাল, মাছ, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করুন। কারন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দেহে শক্তি জোগায়।  গরু এবং খাসির মাংস এড়িয়ে চলুন। কারন এই সমস্ত মাংসে চর্বির মাত্রা বেশি থাকে। তই চিকন হতে হলে চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করুন। 

এছাড়াও শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি এড়িয়ে চলুন। কারন শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণে ওজন বৃদ্ধি পায়। 

৬. ফাস্ট ফুড বর্জন করুন 

ওজন কমাতে বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, এলকোহল যুক্ত কোমল পানীয়, সোডা ইত্যাদি খাওয়া বর্জন করুন। কারন স্বাস্থ্য মোটা হওয়ার অন্যতম কারন হলো ফাস্ট ফুড।। এই সমস্ত খাবারে ক্যালরি এবং ফ্যাটের মাত্রা বেশি পরিমাণে থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

৭. হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন 

ওজন কমাতে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারন চিকন হওয়ার উপায় হিসেবে হাঁটার বিকল্প নেই। দৈনিক সকাল ও বিকেলে অন্তত আধাঘন্টা হাঁটুন। নিয়মিত হাঁটার ফলে আপনার ওজন যেমন কমবে, হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকটা কমে যাবে এবং বিষন্নতা দূর করে মনকে প্রফুল্ল রাখবে। 

৮. দৈনিক সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমান 

প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। চিকন হওয়ার উপায় গুলোর মধ্য ঘুম অপরিহার্য। কারন আমাদের শারীরিক ঘাটতিগুলো ঘুমের মাধ্যমেই পুরন হয় এবং ঘুম থেকেই আমরা শারীরিক শক্তি পেয়ে থাকি। তাই দৈনিক সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমোনো প্রয়োজন। তবে দুপুরে খাবার পর ঘুমানো উচিৎ হবে না। কারন দুপুরে ঘুমালে সেই খাবারটি আমাদের দেহে ফ্যাট হয়ে জমা থাকবে।

৯. মিষ্টি জাতীয় ও তেলে ভাজা খাবার পরিহার করুন 

মিষ্টি জাতীয় খাবার ও বিকেলে ভাজা স্ন্যাক্স বর্জন করুন। কারন এই সমস্ত খাবার আমাদের শরীরে খুব সহজেই চর্বি জমিয়ে দেয়। তাই মোটা স্বাস্থ্য স্লিম বা চিকন করতে চাইলে এই সমস্ত খাবারের পরিবর্তে টাটকা ফলমূল গ্রহণ করুন।   

১০. রাতে ঘুমানোর দুই ঘন্টা পূর্বে খাবার খান

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘন্টা আগে খাবার খেয়ে নিন। কারন রাতে খাওয়ার পরপরই ঘুমালে রাতের পুরো খাবারটি শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হয়ে থাকে। তাই রাতে ঘুমানোর দুই ঘন্টা আগে খাবার খেলে সেই খাবারের ক্যালরি কাজের মধ্যে ক্ষয় হতে শুরু করে। 

১১. মনকে প্রফুল্ল রাখুন 

যতদূর সম্ভব দুশ্চিন্তা দূর করে নিজের মনকে প্রফুল্ল রাখতে চেষ্টা করুন। কারন অতিরিক্ত চিন্তা চিকন হওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করে। ফলে পরিপাক ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে হজমে ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলে সেই খাবার গুলো আমাদের শরীরে ফ্যাটের মাত্রা বৃদ্ধি করে।তাই নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখুন।   

এছাড়াও প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস ও সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করুন। 

ওজন বৃদ্ধির কারণ

বিভিন্ন কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়। যেমন-

  • ক্যালরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরেও অনেকে শারীরিক পরিশ্রম করতে চান না। শারীরিক পরিশ্রমে অভবে ক্যালরি ক্ষয় হয় না। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে। 
  • আজকাল বেশির ভাগ মানুষ ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করেন। ফাস্ট ফুডে পুষ্টির চেয়ে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। 
  • অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার  খাওয়ার ফলেও স্বাস্থ্য মোটা হয়। কেনা জুস বা যেকোনো কোমল পানীয়তে চিনির মাত্রা বেশি থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • স্বাস্থ্য মোটা হওয়ার অন্যতম কারন হলো অধিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা। অনেকে পছন্দের খাবার বেশি খান। অনেকে আবার বিকেলের স্ন্যাক্সে ভাজা খাবার খান। ফলে শরীরে মেদ জমে। 

এছাড়াও অনেকে দুপুরে খাবার পর ভাত ঘুম দেয় এবং রাতে খাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে পরেন। যার ফলে খাবারটি শরীরে ফ্যাট হয়ে জমা থাকে ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। এবং বংশগত কারণেও অথবা কোন রোগ বা বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে স্বাস্থ্য মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

শেষ কথা 

পরিশেষে বলা যায়, স্লিম বা চিকন স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে ওজন যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে সচেতন হতে হবে। ওপরে উল্লেখিত চিকন হওয়ার উপায় গুলো ধৈর্য্যের সাথে অনুসরণ করলে ফল পাওয়া যাবে। তবে যদি আপনি দ্রুত চিকন হতে চান তবে হীতে বিপরীত হবে। কারণ, আপনার স্বাস্থ্য যেমন একদিনে মোটা হয়নি তেমনি দ্রুত চিকন হওয়াটাও সম্ভব নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top